প্রিন্টার কি
Printer
প্রিন্টার কম্পিউটারের একটি আউটপুট ডিভাইস। কম্পিউটারের সঙ্গে ব্যবহৃত যত যন্ত্র আছে তাদের মধ্যে প্রিন্টার বহুল ব্যবহৃত ও প্রয়োজনীয় যন্ত্র। কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফলকে লিখিত আকারে পাওয়ার জন্য প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। কার্যপ্রণালী অনুসারে প্রিন্টারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। ইম্প্যাক্ট প্রিন্টার (Impact Printer) বা ধাক্কা প্রিন্টার ও
২। নন-ইম্প্যাক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer) বা অধাক্কা প্রিন্টার
♦ ইম্প্যাক্ট প্রিন্টার বা ধাক্কা প্রিন্টার
Impact Printer
যে সকল প্রিন্টারে প্রিন্ট হেড কাগজকে স্পর্শ করে তাদেরকে সংস্পর্শ বা ইম্প্যাক্ট প্রিন্টার বলা হয়। এ ধরনের প্রিন্টারের রেজুল্যশন ও গতি কম থাকে। আবার প্রিন্ট করার সময় সাধারণত শব্দ হয়। তবে দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ইম্প্যাক্ট প্রিন্টারকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। লাইন প্রিন্টার (Line Printer) ও
২। অক্ষর প্রিন্টার বা সিরিয়াল (Serial Printer)
লাইন প্রিন্টার
Line Printer
লাইন প্রিন্টার প্রতি বারে একটি করে লাইনের অনেকগুলো ক্যারেক্টার প্রিন্ট করে। সাধারণত প্রতি লাইনে ১৩২টি ক্যারেক্টার থাকে। অনুভূমিক দিক বরাবর ইঞ্চিতে ১০টি ক্যারেক্টার এবং উলম্ব বরাবর প্রতি ইঞ্চিতে ৬ থেকে ৮টি লাইন থাকে। এ ধরনের প্রিন্টার দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে থাকে। এটি প্রতি মিনিটে ২০০ থেকে ৩০০০ লাইন প্রিন্ট করতে পারে। লাইন প্রিন্টারকে প্যারালাল প্রিন্টারও বলা হয়ে থাকে। লাইন প্রিন্টার আবার দই প্রকার। যথা-
১। চেইন প্রিন্টার (Chain Printer) ও
২। ড্রাম প্রিন্টার (Drum Printer)
চেইন প্রিন্টার
Chain Printer
এ ধরনের প্রিন্টারে একটি চেইনে কয়েক সেট বর্ণ থাকে এবং একটি হ্যামার থাকে। এটি এক ধরনের ধাক্কা প্রিন্টার। প্রিন্ট করার সময় অক্ষর খোদাই করা চেইন একটি নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে থাকে এবং চেইনের কোনো বর্ণ কাগজে যে অবস্থানে ছাপাতে হবে সেই অবস্থানে এলে হ্যামার কাগজ ও রিবনকে সে বর্ণের ওপর চেপে ধরে ফলে সেই বর্ণ ছাপা হয়ে যায়। সম্পূর্ণ চেইনটি একবার ঘুরে গেলে একটি পুরো লাইন কাগজে ছাপা হবে। চেইন প্রিন্টারের সুবিধা হলো চেইন নষ্ট হলে সহজেই তা পরিবর্তন করা যায়।
ড্রাম প্রিন্টার
Drum Printer
ড্রাম প্রিন্টার একটি সিলিন্ডার আকৃতির ড্রাম নিয়ে গঠিত, যার গায়ে সারিবদ্ধভাবে অক্ষরসমূহ খোদাই করা থাকে। ড্রাম প্রিন্টারে হ্যামার ও ড্রামের মাঝখানে কার্বন রিবন ও পেপার থাকে। ড্রামটি অনবরত ঘুরতে থাকে এবং অক্ষরগুলো কাগজের প্রিন্ট স্থানে যায়। ছাপার জন্য উপযুক্ত সময়ে নির্দিষ্ট অক্ষরের স্থানে কাগজকে কালিযুক্ত ফিতার গায়ে চাপ দেয়। প্রতিটি লাইন ছাপার জন্য ড্রামের একটি পূর্ণাঙ্গ আবর্তন দরকার হয়। অবশ্য প্রতিটি লাইনে সাধারণত ১৩২টি ক্যারেক্টার থাকে। এ ধরনের প্রিন্টার ব্যয়বহুল এবং ক্যারেক্টার ফন্টগুলো পরিবর্তন করা যায় না।
সিরিয়াল প্রিন্টার
Serial Printer
এ ধরনের প্রিন্টারে ক্রমান্বয়ে ক্যারেক্টরসমূহ প্রিন্ট হয়। অর্থাৎ একটি ক্যারেক্টার প্রিন্ট হওয়ার পর পরবর্তী ক্যারেক্টার প্রিন্ট হয়। এটিকে অক্ষর প্রিন্টারও বলা হয়। এ ধরনের প্রিন্টার ধীরগতিসম্পন্ন এবং মূল্যও তুলনামূলকভাবে কম। সিরিয়াল প্রিন্টারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। ডেইজি হুইল প্রিন্টার (Daisy wheel Printer) ও
২। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার (Dot matrix Printer)
ডেইজি হুইল প্রিন্টার
Daisy wheel Printer
এটি এক ধরনের সলিড ফন্ট টাইপ ক্যারেক্টার প্রিন্টার। এ ধরনের প্রিন্টারের প্রিন্টিং হেডটি চ্যাপ্টা চাকার মতো এবং এর সঙ্গে সাইকেলের স্পোকের মতো অনেকগুলো স্পোক (ঝঢ়ড়শব) লাগানো থাকে এবং প্রতিটি স্পোকের মাথায় একটি করে ক্যারেক্টার খোদাই করা থাকে। প্রিন্টিং হেডটি দেখতে ডেইজি ফুলের মতো হওয়ার এ ধরনের প্রিন্টারের নাম ডেইজি হুইল প্রিন্টার। প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টারের চাকাটি ঘুরতে থাকে এবং অক্ষর খোদাই করা Spoke গুলি কালিযুক্ত রিবনে আঘাত করে এবং কাগজের ওপর অক্ষর ছাপা হয়। এ ধরনের প্রিন্টার উভয় দিকে অক্ষর ছাপাতে পারে এবং ছাপানোর মান ভালো। তবে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। ডেইজি হুইল প্রিন্টারের গতি খুব কম থাকে। এ ধরনের প্রিন্টার সেকেন্ডে ২০ থেকে ৪০টি বর্ণের মতো প্রিন্ট করতে পারে।
ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার
Dot matrix Printer
এটি একটি সংস্পর্শ বা ধাক্কা প্রিন্টার। এ ধরনের প্রিন্টারের প্রিন্টিং হেডের পিনের সাহায্যে কয়েকটি কালির ফোঁটা দিয়ে অক্ষর লেখা হয়। তবে প্রিন্টিং হেড ৯২,৪৪৮ পিন বা আরো বেশি পিনবিশিষ্ট হয়ে থাকে। পিনের সংখ্যা যত বেশি হয় হয়, মুদ্রণের মানও তত উন্নত হয়। প্রিন্টারে কাগজ ও প্রিন্টার হেডের মাঝে এক ধরনের কালিযুক্ত রিবন থাকে। যখন যে বর্ণ ছাপাতে হয় তখন সেই বর্ণের বিন্দুগুলোর অনুরূপ পিনগুলো প্রিন্ট হেড থেকে বেরিয়ে এসে কালি মাখানো রিবনকে কাগজের ওপর চেপে ধরে। ফলে সেই বর্ণের ডটগুলো, অর্থাৎ সেই বর্ণটি ছাপানো হয়ে যায়। একটি পুরো লাইন হয়ে গেলে কাগজ একটু সরে গিয়ে পরের লাইনে চলে আসে আর প্রিন্ট হেডও সেই সাথে বাঁ দিকে শেষ প্রামেত্ম সরে গিয়ে আবার ছাপাতে শুরম্ন করে। তবে কিছু ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার উভয়মুখী, অর্থাৎ তারা বাম থেকে ডান এবং ডান থেকে বাম উভয় দিকেই ছাপাতে পারে। এতে ছাপানো অপেক্ষাকৃত দ্রুত হয়।
বিভিন্ন ধরনের ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার পাওয়া যায়। যেমন 7 × 5, 9 × 7 ইত্যাদি। একটি 7 × 5 ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারে ৭টি সারি ও ৫টি স্তম্ভে মোট ৩৫টি পিন আটকানো থাকে। একটি বর্ণ প্রিন্ট করতে ৭টি ডট দিয়ে মোট ৫ বার ধাক্কা লাগে। এটাই হলো ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের মুলনীতি। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৫০ থেকে ৫০০টি বর্ণ ছাপানো যায় এবং লেখা ছাড়াও ছবি এবং গ্রাফ ছাপানো যায়।
♦ নন-ইম্প্যাক্ট প্রিন্টার
Non-Impact Printer
যে সকল প্রিন্টারে প্রিন্ট হেড কাগজকে সাধারণত স্পর্শ করে না তাদেরকে নন-ইম্প্যাক্ট প্রিন্টার বলা হয়। এ ধরনের
প্রিন্টারের রেজুল্যশন ও গতি বেশি থাকে। আবার প্রিন্ট করার সময় সাধারণত শব্দ হয় না। তবে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি
থাকে। নন-ইম্প্যাক্ট প্রিন্টার বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
১। লেজার প্রিন্টার (Laser Printer)
২। ইংকজেট প্রিন্টার (Ink-Jet Printer)
৩। থার্মাল প্রিন্টার (Thirmal Printer)
৪। স্থির বা স্থিতি বৈদ্যুতিক প্রিন্টার (Electrostatic Printer); ইত্যাদি।
লেজার প্রিন্টার
Laser Printer
প্রিন্টিংয়ের গুণগত মানের দিক থেকে লেজার প্রিন্টার হচ্ছে সবচেয়ে ভালো প্রিন্টার। যদিও নন-ইম্প্যাক্ট প্রিন্টারের মধ্যে সবচেয়ে দামি প্রিন্টার। কিন্তু এ ধরনের প্রিন্টারের মাধ্যমে দ্রুততিতে ও সবচেয়ে সুন্দরতম লেখা ছাপানো যায়। তবে লেজার প্রিন্টার লেজার (LASER- Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation) রশ্মির সাহায্যে কাগজে লেখা ফুটিয়ে তোলে। লেজার প্রিন্টারের প্রধান অংশগুলো হলো লেজার হেড, ড্রাম ইউনিট ও টোনার কার্টিজ। ড্রাম ইউনিট আলোক সংবেদনশীল উপাদান দ্বারা তৈরি।
যখন ড্রাম ইউনিটটি ঘুরে তখন এক ধরনের স্থির ধনাত্মক চার্জ তৈরি হয়। লেজার হেডটি পরিচালনা করার জন্য এক ধরনের জটিল সার্কিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টোনারের মধ্যে থাকে গুঁড়ো কালি। প্রতিটি লেজার প্রিন্টারে একটি বিশেষ মেমরি থাকে। যে ডেটা প্রিন্ট করতে হবে সিস্টেম ইউনিট থেকে সে ডেটা লেজার প্রিন্টারের বিশেষ মেমরিতে নিয়ে আসে। এ ধরনের প্রিন্টারের গতি সাধারণত 10,000 lpm (Line per Minute)|
ইংকজেট প্রিন্টার
Ink-Jet Printer
যে প্রিন্টার কালি ছড়িয়ে বা স্প্রে করে কম্পিউটারের ফলাফলকে প্রিন্ট করে তাকে ইংকজেট প্রিন্টার বলা হয়। প্রিন্টের গুণগতমান ও দামের দিক দিয়ে এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং ভালো প্রিন্টার। এ ধরনের প্রিন্টারের প্রধান অংশ হলো প্রিন্টিং হেড, কার্টিজ, হেড সরানো এবং কাগজ গ্রহণ করার কৌশল। প্রিন্টারের হেডে অনেকগুরো ছিদ্র (৩০০ থেকে ৬০০টি ছিদ্র) সাজানো থাকে। ছিদ্রের ব্যাস ৫০ থেকে ৬০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। কার্টিজের মধ্যে তরল কালি (কালার প্রিন্টারের ক্ষেত্রে চারটি রঙের কালি) ব্যবহার করা হয়। প্রিন্টিং হেডের সাথে কালি বসানো থাকে। আর তরল কালিগুলো হেডের ছিদ্র পথ দিয়ে স্প্রে করা হয়। হেডটি বাম দিক থেকে ডান দিকে গেলে একটি লাইন প্রিন্ট হয়।
একটি লাইন প্রিন্ট হওয়ার পর কাগজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী লাইনে প্রিন্ট হওয়ার অবস্থানে যায়। এ ধরনের প্রিন্টারের প্রিন্ট কোয়ালিটি থার্মাল প্রিন্টারের চেয়ে ভালো এবং রেজুল্যশন 360 DPI থেকে 1440 DPI পর্যন্ত হয়ে থাকে।
থার্মাল প্রিন্টার
Thirmal Printer
থার্মাল প্রিন্টারে কোনো কালি ও রিবন ব্যবহৃত হয় না, শুধু রাসায়নিক প্রলেপ দেওয়া কাগজ ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের প্রিন্ট হেড অনেকটা ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের মতো তবে পিনের বদলে থাকে কতকগুলো বৈদ্যুতিক রোধকের বিন্দু। ছাপার কাগজে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ লাগানো থাকে, যা খুব দামি এবং যার সাহায্যে প্রিন্ট করা হয়। এ ধরনের প্রিন্টারের ছাপানোর গতি সাধারণত 5,000 lpm ।
স্থির বৈদ্যুতিক প্রিন্টার
Electrostatic Printer
ইলেট্রোস্ট্যাটিক প্রিন্টার কম্পিউটারের ফলাফলকে বৈদ্যুতিক চার্জের সাহায্যে প্রিন্ট করে। এটির কার্যপ্রণালী ফটোস্ট্যাট মেশিনের অনুরূপ। এ ধরনের প্রিন্টারে কতকগুলো লিব থাকে যাকে, বলে স্টাইলাস এবং যার দ্বারা লেখা হয়। বিশেষ ধরনের কাগজে লিব দ্বারা কোনো বর্ণের ডট ম্যাট্রিক্স উৎপন্ন করা হয়, তবে ডটগুলো হয় বৈদ্যুতিক চার্জের। এ ধরনের প্রিন্টারের সাহায্যে ছাপা ভালো হয় এবং প্রিন্টারের ছাপানোর গতি সাধারণত 5,000 lpm ।
প্লটার
Ploter
প্লটার এক ধরনের বিশেষ ধরনের আউটপুট ডিভাইজ যা প্রিন্টারের মতোই কাজ করে। মূলত বৃহৎ আকারের ছবি, প্রতীক, মানচিত্র, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ইত্যাদির কাজে প্লটার ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ভবনের নকশা, বিশাল ও সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতির নকশা, মানচিত্র ইত্যাদির মুদ্রণ নেওয়ার জন্যও প্লটার ব্যবহৃত হয়। প্লটার সাধারণত ২ প্রকার। যথা-
১। ফ্ল্যাটবেড (Flat bed) প্লটার ও
২। ড্রাম (Drum) প্লটার
সারসংক্ষেপ :
প্রিন্টার কম্পিউটারের একটি আউটপুট ডিভাইস। কম্পিউটারের সঙ্গে ব্যবহৃত যত যন্ত্র আছে তাদের মধ্যে প্রিন্টার বহুল ব্যবহৃত ও প্রয়োজনীয় যন্ত্র। কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফলকে লিখিত আকারে পাওয়ার জন্য প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার, ইংকজেট প্রিন্টার ও লেজার প্রিনটার ইত্যাদি হলো জনপ্রিয় প্রিন্টার। আপরদিকে পস্নটার হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের আউটপুট ডিভাইস। যা মূলত বৃহৎ আকারের ছবি, প্রতীক, মানচিত্র, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ইত্যাদির কাজে ব্যবহৃত হয়। যদিও এটা প্রিন্টারের মতো ইমেজ বা ছবি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কিন্তু এর কার্যপ্রণালী প্রিন্টার হতে ভিন্ন। তাছাড়া ভবনের নকশা, বিশাল ও সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতির নকশা, মানচিত্র ইত্যাদির মুদ্রণ নেওয়ার জন্যও প্লটার ব্যবহৃত হয়।
0 comments:
Post a Comment