মনিটর কি
মনিটর (Monitor): কম্পিউটারের সাহায্যে ডেটা প্রক্রিয়াকরণের পর তৈরীকৃত ফলাফল যখন কোনো ডিভাইস বা হার্ডওয়্যারের সাহায্যে প্রদর্শিত হয় বা শোনা যায় তাকে সফটকপি বলে। আর ব্যবহৃত ডিভাইস বা হার্ডওয়্যারসমূহকে সফটকপি আউটপুট হার্ডওয়্যার বলে। মনিটর হলো একটি অন্যতম সফ্টকপি আউটপুট হার্ডওয়্যার, যা দেখতে সাধারণত টেলিভিশনের পর্দার মতো। মনিটর সাদা-কালো বা রঙিন হয়ে থাকে। আবার অ্যানালগ কিংবা ডিজিটালও হতে পারে। কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত মনিটর সাধারণত ১৪ থেকে ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। তবে ১৪ থেকে ১৯ ইঞ্চি মনিটর সচরাচর বেশি ব্যবহৃত হয়।
প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে মনিটরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১। ক্যাথোড রশ্মির টিউব মনিটর (Cathod Ray Tube - CRT) ও
২। ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর (Flat Panel Monitor)
ক্যাথোড রশ্মির টিউব মনিটর (সিআরটি মনিটর)
Cathod Ray Tube Monitor
সিআরটি মনিটরের প্রধান উপকরণ হলো পিকচার টিউব। টিউবের ভেতরের দিকে লাল, সবুজ ও আসমানি-এ তিনটি মৌলিক বর্ণের ফসফরাসের আবরণের প্রলেপ থাকে। পেছনের দিকে ইলেকট্রন বিম নিক্ষেপের জন্য একটি ইলেকট্রন গান থাকে। ইলেকট্রন বিম ফসফরাসের ওপরে পতিত হলে ফসফরাস উজ্জ্বল আলো নির্গত করে। ফসফরাসের ধরনের ভিত্তিতে মনিটরের পর্দায় প্রদর্শিত বিষয় এক রঙের বা বহু রঙের হতে পারে। ফসফরাসের আবরণটি অনেকগুলো বিন্দু বা ডটের সমন্বয়ে গঠিত। এদেরকে পিক্সেল বলা হয়। কম্পিউটারের তথ্য প্রদর্শনের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে পিক্সেল। মনিটরের পর্দায় একটি ইমেজ বা চিত্র তখনই পূর্ণাঙ্গভাবে অবলোকন করা যায়, যখন ইলেকট্রন বিম সম্পূর্ণ স্ক্রিনটিকে স্ক্যান করে এবং প্রতিটি পিক্সেলকে উজ্জ্বল করে দেয়। পিক্সেলের সংখ্যার ওপর মনিটরের রেজুল্যশন নির্ভর করে। বর্তমানে প্রচলিত মনিটরগুলো সাধারণত ৬৪০০০ থেকে ২ মিলিয়ন পিক্সেলবিশিষ্ট হয়ে থাকে।
CRT মনিটরের ডিসপ্লে উজ্জ্বলতা কম, আয়তনে বড় এবং ওজন বেশি। সাধারণত সহজে বহন করা যায় না। এ সমস্ত অসুবিধা দূর করতে সৃষ্টি হয়েছে ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে।
ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর
Flat Panel Monitor
এ ধরনের মনিটরগুলোতে ইলেকট্রন গান বা পিকচার টিউব থাকে না। সাধারণত ক্যাথোড রশ্মি টিউবের পরিবর্তে এলসিডি (Liquid Crystal Display-LCD) বা এলইডি (Light Emitting Diode-LED) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ডেস্কটপ থেকে শুরম্ন করে নোটবুক, ল্যাপটপ ইত্যাদিতে ক্যাথোড রশ্মি টিউবের পরিবর্তে এলসিডি বা এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ক্যাথোড রশ্মি মনিটর বেশি জায়গা দখল করে এবং প্রচুর বৈদ্যুতিক শক্তি খরচ করে। ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর এদিক থেকে সুবিধাজনক।
মনিটরের বৈশিষ্ট্য
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের মনিটর বাজারে পাওয়া যায়। নিম্নে মনিটরের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
পিক্সেল : কম্পিউটারের তথ্য প্রদর্শনের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে পিক্সেল। পিক্সেল হচ্ছে ডেটা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত মাধ্যমের (মনিটরের পর্দা) ক্ষুদ্রতম এলাকা, যার বর্ণ ও উজ্জ্বলতা স্বতন্ত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রেজুল্যশন : ডিসপেস্ন স্ক্রিনে প্রদর্শিত ছবির সূক্ষনতাকে রেজুল্যশন বলে। একটি মনিটরের রেজুল্যশন যত বেশি হবে, মনিটরটি তত বেশি ভাল হবে। অর্থাৎ মনিটরে অক্ষর বা ইমেজ তত পরিচ্ছন্ন ও স্পষ্ট হবে। একটি CRT তে যতগুলো পিক্সেল কলাম ও সারি থাকে, তার গুণিতক মান হলো উক্ত CRTটির রেজুল্যশন । যেমন- একটি CRT তে ৬৪০টি কলাম এবং ৪৮০টি পিক্সেল সারি আছে, তাহলে CRT এর রেজুল্যশন হবে ৬৪০ X 480।
নন-ইন্টারলেস্ড : মনিটরের জন্য নন-ইন্টারলেসড গুরম্নত্বপূর্ণ। টেলিভিশনের ছবি চোখে দৃশ্যমান এবং গতিমান রাখার জন্যে একটা ছবিকে ফ্রেম হিসেবে পাঠানো হয়। একটা ফ্রেমে ২৫টি লাইন থাকে এবং পরবর্তী ফ্রেমের ২৫টি লাইন থাকে। এখন গতিময়তা দেবার জন্যে এক ফ্রেমকে অন্য ফ্রেমের ওপর ১, ৩, ৫, ৭, ও ২, ৪, ৬, ৮ পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়। একে ইন্টারলেসিং বলে। যেহেতু কম্পিউটারের কার্যগতি টেলিভিশনের ফ্রিকোয়েন্সির চেয়ে অনেক অনেক বেশি, তাই মনিটরের চিত্র নন-ইন্টারলেসড হওয়া ভাল। এতে মানুষের চোখ ভালো থাকবে এবং দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি পাবে।
লো-রেডিয়েশন : বর্তমানে ব্ল্যাক ট্রিনিট্রিন পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে মনিটরের পর্দাকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে ভেতরের ইলেকট্রনসমূহ বাইরে যথাসম্ভব না বেরিয়ে পর্দায় লেখার উজ্জ্বলতা বাড়াবে আর সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মানুষের চোখ রক্ষা পাবে।
0 comments:
Post a Comment