প্রসেসর কি
মাইক্রোপ্রসেসর বা প্রসেসর
Microprocerssor or Processor
কম্পিউটারের কার্যব্যবস্থাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার জন্য কম্পিউটারের যে অংশটি বা হার্ডওয়্যারটি সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে, তাকে মাইক্রোপ্রসেসর বা প্রসেসর হিসেবে অভিহিত করা হয়। মাইক্রোপ্রসেসর হলো সিলিকনের তৈরি এক ধরনের ভিএলএসআই (VLSI-Very Large Scale Integration) চিপ। একটি একক ভিএলএসআই সিলিকন চিপের মধ্যে এক মিলিয়নেরও অধিক ডায়োড, ট্রানজিস্টর, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি একীভূত থাকে। মাইক্রোপ্রসেসর মাইক্রোকম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ হিসেবে কাজ করে। মাইক্রোপ্রসেসরকেই মাইক্রোকম্পিউটারের মস্তিষ্ক বা ব্রেইন বলা হয়। মাদারবোর্ডের প্রসেসর সকেটে মাইক্রোপ্রসেসর ইনস্টল করার জন্য নিমেণর ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়।
যথা-
১. প্রসেসর সকেট লিভার ৯০ ডিগ্রি কোণ বরাবর টেনে তুলতে হবে।
২. মাদারবোর্ডের নির্ধারিত প্রসেসর বসানোর জায়গায় প্রসেসরটি সাবধানের সহিত বসাতে হবে।
৩. সঠিকভাবে বসানো হলে প্রসেসরটিকে হাত দিয়ে চেপে ধরে লিভারটিকে প্রসেসর হোল্ডারের যে স্থানে লক আছে সে পর্যন্ত টেনে নামিয়ে আটকাতে হবে।
বিটের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে মাইক্রোপ্রসেসরের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন : ৪-বিট মাইক্রোপ্রসেসর, ১৬-বিট মাইক্রোপ্রসেসর, ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর, ৬৪-বিট মাইক্রোপ্রসেসর ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রের ইনেটল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করে। এটি ছিল Intel 4000 নামের ৪ বিট মাইক্রোপ্রসেসর। কালের বিবর্তনে বর্তমানে ইনেটল কোর আই নাইন Intel Core i9th-10th (2nd GEN) বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাইক্রোপ্রসেসর তৈরিতে বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো ইনেটল কর্পোরেশন (Intel Corporation), মটোরোলা (Motorola), আইবিএম (IBM – International Business Machine), এএমডি (AMD – Advanced Micro Devices), সাইরিক্স (Cyrix), টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট (TI - Texas Instrument), এনভিডিয়া (NVidia), কোয়ালকম (Qualcomm) ইত্যাদি।
মাইক্রোপ্রসেসরের সংগঠন
Organization of Microprocrssor
মাইক্রোপ্রসেসর প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা-
১. নিয়ন্ত্রণ অংশ (Control Unit)
২. গাণিতিক যুক্তি অংশ (Arithmetic Logic Unit) ও
৩. রেজিস্টারসমূহ (Register Set)
নিয়ন্ত্রণ অংশ (Control Unit) : কনেট্রাল বা নিয়ন্ত্রণ ইউনিট কম্পিউটারের সকল অংশকে নিয়ন্ত্রণের ও পরিচালনার কাজে নিয়োজিত থাকে। এটি কম্পিউটারের প্রতিটি নির্দেশ পরীক্ষা করে এবং কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংকেত তৈরি করে। মেমরিতে কখন তথ্যের প্রয়োজন হবে- সহায়ক মেমরি হতে কখন প্রধান মেমরিতে তথ্য নিতে হবে, কখন ইনপুট হতে উপাত্ত নিতে হবে, কখন ফলাফল দিতে হবে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের প্রধান কাজই হলো মেমরি হতে ইনস্টাকশন কোড পড়া ও ডিকোড করা এবং মাইক্রোপ্রসেসরের অন্য অংশসমূহকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় কনেট্রাল সিগন্যাল তৈরি করা। যেমন- গাণিতিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য মাইক্রোপ্রসেসরের গাণিতিক যুক্তি অংশকে কনেট্রাল সিগন্যালের মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করা।
গাণিতিক যুক্তি অংশ (Arithmetic Logic Unit) : নিয়ন্ত্রণ অংশের তত্ত্বাবধানে গাণিতিক যুক্তি অংশ বা অখট বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক বা লজিক্যাল অপারেশনের কাজ সম্পাদান করে। বেশির ভাগ গাণিতিক অপারেশনগুলো হলো যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এবং লজিক্যাল অপারেশনগুলো হলো তুলনা, সত্য-মিথ্যা যাচাই ইত্যাদি। আবার রেজিস্টার পরিষ্কারকরণ এবং রেজিস্টারে সংরক্ষিত তথ্য বা সংখ্যাকে ডানে-বামে সরানো ইত্যাদি কাজও এ অংশের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক বর্তনীর সহায়তায় গাণিতিক যুক্তি অংশ এসব কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে এবং প্রয়োজনে ফলাফল অস্থায়ীভাবে রেজিস্টারে সংরক্ষক্ষত রাখে। বর্তমানের মাইক্রোপ্রসেসরগুলোতে কাজের গতি বাড়ানোর প্রয়োজনে একাধিক গাণিতিক যুক্তি অংশ ব্যবহৃত হয়।
রেজিস্টারসমূহ (Register Set) : মূলত মাইক্রোপ্রসেসরের অস্থায়ী মেমরি রেজিস্টার হিসেবে কাজ করে। রেজিস্টার তৈরি হয় ফ্লিপ-ফলপের সাহায্যে। এগুলোর কাজ করার ক্ষমতা অত্যন্ত দ্রুত। মাইক্রোপ্রসেসরের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য এর অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের রেজিস্টার ব্যবহৃত হয়। যেমন- অ্যাকুমুলেটর, ইনস্টাকশন রেজিস্টার, প্রোগ্রাম কাউন্টার ইত্যাদি। মাইক্রোপ্রসেসর যখন হিসাব-নিকাশের কার্যাবলি সম্পাদন করে তখন ডেটাকে সাময়িকভাবে জমা রাখার জন্য রেজিস্টারসমূহ ব্যবহৃত হয়।
রেজিস্টারের সংখ্যা মাইক্রোপ্রসেসর ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আবার রেজিস্টারের ধারণক্ষমতা ভিন ভিন্ন হতে পারে। যেমন- ৮-বিট রেজিস্টার, ১৬-বিট রেজিস্টার, ৩২-বিট রেজিস্টার, ৬৪-বিট রেজিস্টার ইত্যাদি। নিমেণ ১৬ বিট রেজিস্টারের চিত্র দেখানো হলো-
মাইক্রোপ্রসেসরের কাজ (Functions of Microprocessor)
সিপিইউ বা মাইক্রোপ্রসেসরের কাজগুলো নিমণরূপ-
১. কম্পিউটারের সকল অংশের নিয়ন্ত্রণ ও সময় নির্ধারণ সংকেত প্রদান করা।
২. বাসের সাহায্যে কম্পিউটারের সকল অংশের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা।
৩. মেমরি ও ইনপুট-আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে ডেটার আদান-প্রদান করা।
৪. ইনস্টাকশন এনকোড ও ডিকোড করা।
৫. গাণিতিক ও যুক্তিমূলক কাজ বা সিদ্ধান্তমূলক কাজ করা।
৬. মেমরিতে সংরক্ষিত প্রোগ্রাম নির্বাহ করা।
৭. প্রক্রিয়াকরণের পর প্রাপ্ত হিসাবের ফলাফল প্রদর্শন করা।
৮. সহায়ক স্মৃতিতে নির্দেশনা ও ডেটা মজুদ করে রাখা।
৯. ইনপুট ও আউটপুট অংশগুলোর সাথে সমন্বয় সাধন করা; ইত্যাদি।
প্র্রসেসরের গতি
Speed of Processor
মাইক্রোকম্পিউটার তার সিস্টেম ক্লকের মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসরের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। সিস্টেম ক্লকের কাজের গতি বেশি হলে কম্পিউটারের কাজের গতিও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে সিস্টেম ক্লকের গতি কম হলে কম্পিউটারের কাজের গতিও কম হয়। মাইক্রোকম্পিউটারের গতি বিবেচনা করা হয় মাইক্রোপ্রসেসরের ক্লক স্পিড (Clock Speed)-এর দ্বারা। ক্লক স্পিড পরিমাপ করা হয় প্রতি সেকেন্ডে কতটি স্পন্দন (Pulse) বা টিক সম্পন্ন হয় তার ওপর নির্ভর করে। স্পন্দন পরিমাপ করা হয় হার্টজে। প্রসেসরের ক্লকটি প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিয়ন বার স্পন্দন বা টিক করার সময়কে ১ মেগাহার্টজ হিসেবে অভিহিত করা হয়। যেমন- কোনো প্রসেসরের গতি যদি ৩৩ মেগাহার্টজ হয়, তাহলে তার অর্থ হলো প্রতি সেকেন্ড ৩৩,০০০,০০০ স্পন্দন তৈরি হবে। অর্থাৎ উক্ত প্রসেসরটি প্রতি সেকেন্ডে ৩৩,০০০,০০০ ইনস্ট্রাকশন আদান-প্রদান করতে পারবে। এই স্পন্দনকেই ক্লক স্পিড (Clock Speed) বলা হয়। সুতরাং প্রসেসরের স্পিড বা গতি বলতে প্রসেসরটি কত কিলোহার্টজ, মেগাহার্টজ বা গিগাহার্টজের তাই-ই বোঝায়।
কম্পিউটার নির্মাতাগণ কম্পিউটার তৈরির প্রথম দিকে ৫ MHz থেকে ৮ MHz (Mega Hertz) স্পিডসমৃদ্ধ প্রসেসর ক্লক নির্মাণ করে থাকেন। পরবর্তী সময়ে উক্ত স্পিড ৮ MHz থেকে ১২ MHz-এ উন্নীতি করা হয়। তারপর ১৯৯০ সালের দিকে ইনেটল কর্পোরেশন যখন ৮০৪৬ DX প্রসেসর নির্মাণ শুরু করেন তখন ৬৬ MHz স্পিডের প্রসেসর তৈরি শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্পিডের প্রসেসর নির্মাণে এগিয়ে আসেন। বর্তমানে ৫০০ MHz থেকে ৪ GHz পর্যন্ত স্পিডের প্রসেসর পাওয়া যাচ্ছে। তবে সার্বিকভাবে কোনো কম্পিউটার থেকে ভালো গতি পেতে হলে প্রসেসরের গতির পাশাপাশি অন্য যে সকল উপাদানের প্রতি লক্ষ ও সমন্বয়সাধন করতে হবে তা হলো- ক্লক সাইকেল, বাসের গতি, রেজিস্টারের প্রশস্ততা, অভ্যন্তরীণ ক্যাশ মেমরি, প্রধান মেমরির সাইজ ও অ্যাকসেস টাইম, মাইক্রোপ্রসেসরের আর্কিটেকচার এবং প্রসেসর সমর্থনযোগ্য উন্নত চিপসেটের মাদারবোর্ড ইত্যাদি।
সাধারণত মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারের প্রসেসরের গতি পরিমাপ করা হয় MHz বা GHz এ। কিন্তু মিনি ও মেইনফ্রেম কম্পিউটারের প্রসেসরের গতি পরিমাপ করা হয় MIPS (Millions of Instructions per Second) বা BIPS (Billions of Instructions per Second) এ। আবার সুপার কম্পিউটারের প্রসেসরের গতি পরিমাপ করা হয় MFLOPS (Millions of Floating Point Operations per Second), GFLOPS (Giga of Floating Point Operations per Second), TFLOPS (Tera of Floating Point Operations per Second) ইত্যাদিতে।

0 comments:
Post a Comment