কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার (Computer Hardware): কম্পিউটার তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস বা যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশসমূহকে বলা হয় কম্পিউটার হার্ডওয়্যার। সাধারণত কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে আমরা দেখতে পারি এবং স্পর্শ করতে পারি। কি-বোর্ড, মাউস, মাইক্রোপ্রসেসর, মাদারবোর্ড, ডিস্ক, ডিস্ক ড্রাইভ, মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি হলো কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের উদাহরণ। কালের বিবর্তনে, আধুনিকীকরণের ধারাবাহিকতা, গুণগত মান পরিবর্তন এবং নতুনতারো উদ্ভাবনার ফলে কম্পিউটার সিস্টেমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হার্ডওয়্যার সংযোজিত হচ্ছে। বর্তমান সিস্টেমের কম্পিউটারসমূহের হার্ডওয়্যার পূর্বের কম্পিউটারের চেয়ে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আকৃতিতেও অনেক ছোট। হার্ডওয়্যারকে কম্পিউটারের দেহ বলা যেতে পারে।
কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের শ্রেণিবিভাগ
Classification of Computer Hardware
কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে সাধারণত বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. ইনপুট হার্ডওয়্যার (Input Hardware)
২. প্রসেসিং হার্ডওয়্যার (Processing Hardware)
৩. স্টোরেজ হার্ডওয়্যার (Storage Hardware)
৪. আউটপুট হার্ডওয়্যার (Output Hardware)
৫. কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার (Communication Hardware); ইত্যাদি।
ইনপুট হার্ডওয়্যার
Input Hardware
কম্পিউটারকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য যে সকল ডিভাইস বা যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে ইনপুট হার্ডওয়্যার বলা হয়। ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের ডেটা গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাসমূহ কম্পিউটার কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট হার্ডওয়্যারসমূহের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে থাকে। কম্পিউটার সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের ইনপুট হার্ডওয়্যার সংযোজিত থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ইনপুট হার্ডওয়্যারের নাম হলো-
১। মাউস (Mouse)
২। কি-বোর্ড (KeyBoard)
৩। ওএমআর (OMR)
৪। ওসিআর (OCR)
৫। এমআইসিআর (MICR)
৬। স্ক্যানার (Scanner)
৭। ডিজিটাইজার (Dizitizer)
৮। লাইটপেন (Lightpen); ইত্যাদি।
প্রসেসিং হার্ডওয়্যার
Processing Hardware
ব্যবহারকারীর কাঙিক্ষত ফলাফল কম্পিউটার তার প্রক্রিয়াকরণের ফলাফলের মাধ্যমে পূরণ করে থাকে। প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণের কাজের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত হার্ডওয়্যারসমূহকে বলা হয় প্রসেসিং হার্ডওয়্যার। সাধারণত সিস্টেম ইউনিটের (কম্পিউটারের কেসিং) অভ্যন্তরে প্রসেসিং হার্ডওয়্যারসমূহ অবস্থান করে। কম্পিউটারের প্রসেসিং কাজের সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রসেসিং হার্ডওয়্যার জড়িত থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো-
১. মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocrssor)
২. মেমরি (Memory)
৩. রম চিপ (ROM chips)
৪. ভির্যাম (VRAM)
৫. বাস (BUS)
৬. মাদারবোর্ড (Motherboard)
৭. পোর্ট (port)
৮. পাওয়ার সাপ্লাই (Power Supply)
৯. এক্সপানশন স্লট (Expansion slot); ইত্যাদি।
স্টোরেজ হার্ডওয়্যার
Storage Hardware
মূলত কম্পিউটার ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে গ্রহণকৃত ডেটাসমূহকে প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফল বা আউটপুট প্রদান করে। তবে কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণের পর প্রক্রিয়াজাতকৃত ফলাফল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হার্ডওয়্যারসমূহই হলো স্টোরেজ হার্ডওয়্যার। অর্থাৎ কম্পিউটারের বিভিন্ন ডেটা, তথ্য বা নির্দেশাবলি, ইমেজ, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিকে স্টোরেজ ডিভাইস বা স্টোরেজ হার্ডওয়্যার বলা হয়। প্রক্রিয়াকরণের সুবিধার জন্য স্টোরেজ হার্ডওয়্যারে ডেটা ও নির্দেশাবলি জমা রাখা যায় এবং প্রয়োজনে তা সহজে কাজে লাগানো যায়। হার্ডডিস্ক, ফ্লোপিডিস্ক, অপটিক্যাল ডিস্ক, সলিড স্টেড ডিভাইস, পেনড্রাইভ, ম্যাগনেটিভ টেইপ, চৌম্বক ড্রাম, জিপ ড্রাইভ ইত্যাদি হলো উল্লেখযোগ্য স্টোরেজ হার্ডওয়্যার।
আউটপুট হার্ডওয়্যার
Output Hardware
কম্পিউটারের ফলাফল প্রদর্শনের বা প্রদানের কাজে বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার জড়িত থাকে। এ সকল হার্ডওয়্যার আউটপুট হার্ডওয়্যার নামে পরিচিত। অর্থাৎ কম্পিউটারের ইনপুট হার্ডওয়্যারসমূহের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাসমূহ প্রক্রিয়াকরণ অংশে প্রক্রিয়াজাত হয়ে যে সকল হার্ডওয়্যারের সাহায্যে ফলাফল প্রদান বা প্রর্দশন করায় সেগুলোকে আউটপুট যন্ত্রাংশ বা আউটপুট হার্ডওয়্যার বলা হয়।
উল্লেখযোগ্য আউটপুট হার্ডওয়্যারসমূহ হলো-
১। মনিটর (Monitor)
২। প্রিন্টার (Printer)
৩। প্লটার (Ploter)
৪। স্পিকার (Speaker)
৫। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর (Multimedia Projector)
৬। ইমেজ সেটার (Image Setter)
৭। ফিলম রেকর্ডার (Flim Recoder)
৮। হেড ফোন (Headphone) ; ইত্যাদি।
কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার
Communication Hardware
কম্পিউটার শুধু ডেটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ফলাফলই প্রদান করার কাজে নিয়োজিত থাকে না; পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন অবস্থানে অবস্থিত কম্পিউটার বা কম্পিউটারসমূহ অথবা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিভাইসসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে ইনফরমেশন আদান-প্রদান বা শেয়ার করে। এ সকল হার্ডওয়্যারকেই বলা হয় কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার। অর্থাৎ এক কম্পিউটার হতে অন্য কম্পিউটারে অথবা এক ডিভাইস হতে অন্য ডিভাইসে যোগাযোগ তথা ডেটা আদান প্রদান, শেয়ার ইত্যাদির জন্য যে সমস্ত ডিভাইস বা হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে বলা হয় কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার। ডেটা কমিউনিকেশনের কাজে ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যারগুলো হলো-
♦ মডেম (Modem)
♦ হাব (Hub)
♦ সুইচ (Switch)
♦ রিপিটার (Repeater)
♦ ব্রিজ (Bridge)
♦ রাউটার (Router)
♦ গেটওয়ে (Getway)
♦ নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড; ইত্যাদি।

0 comments:
Post a Comment