কম্পিউটার বাস
Computer Bus
সাধারণত বাস বলতে কোনো যোগাযোগের মাধ্যমকেই বোঝায়। কিন্তু কম্পিউটারের বাস হলো এমন একগুচ্ছ তার, যার মধ্যে দিয়ে ডিজিটাল সংকেত ০ বা ১ চলাচল করতে পারে। বাসের সাহায্যেই কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে। বাস মূলত কম্পিউটারের সাংগঠনিক বিভিন্ন অংশ যেমনইনপুট অংশ, আউটপুট অংশ, মাইক্রোপ্রসেসর, মেমরি বা রেজিস্টার, মাদারবোর্ডে অবস্থানরত অন্য চিপসমূহের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদান করে। কম্পিউটারের বাস কতকগুলো বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইনের সাহায্যে গঠিত, যার মাধ্যমে কম্পিউটারের এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডেটা, তথ্য, সিগন্যাল, নির্দেশ বা প্রোগ্রাম আদান-প্রদানের কাজ সম্পন্ন হয়। তবে একই সময়ে কম্পিউটারের বাসের মধ্যে দিয়ে যতগুলো বিট চলাচল করে তাকে বলা হয় বাসের উইডথ বা প্রশস্ততা। যেমন- কোনো বাসের উইডথ ৩২ বিট বলতে বাসের মধ্যে দিয়ে একই সাথে ৩২টি বিট চলাচল করতে পারে। বাসের গতি মাপা হয় মেগাহার্টজে। তবে এই গতি গিগাহার্টজও হতে পারে। যেমন- ১৩৩ মেগাহার্টজ, ২০০ মেগাহার্টজ, ৪০০ মেগাহার্টজ ইত্যাদি । বাসের প্রশস্ততা যত বেশি হবে, কম্পিউটার ডেটা তত বেশি দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে।
কম্পিউটার বাস কত প্রকার
কম্পিউটার বাসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১। সিস্টেম বাস (System Bus) বা প্রধান বাস ও
২। এক্সপানশন বাস (Expansion Bus) বা সম্প্রসারিত বাস
সিস্টেম বাস
System Bus
যে সমস্ত বাস মাদারবোর্ড ও সিপিইউ বা মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থেকে মেমরি, ইনপুট-আউটপুটসহ অন্যান্য ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে তথ্য আদান-প্রদান করে তাদেরকে সিস্টেম বাস বলে। সিস্টেম বাসকে ইন্টারনাল বাসও বলা হয়। সিস্টেম বাসকে ব্যবহারিক দিক থেকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১। ডেটা বাস (Data Bus)
২। অ্যাড্রেস বাস (Address Bus )
৩। কন্ট্রোল বাস (Control Bus)
ডেটা বাস (Data Bus) : কম্পিউটারের সিস্টেম ইউনিটের অভ্যন্তরের বিভিন্ন উপাদান যেমন মাইক্রোপ্রসেসর, হার্ডডিস্ক, র্যাম, ইনপুট/আউটপুট পোর্ট ইত্যাদির মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানে যে বাস ব্যবহৃত বাসকে ডেটা বাস বলা হয়। ডেটা বাসের মাধ্যমে কম্পিউটার ইনপুট/আউটপুট ডিভাইস থেকে প্রসেসর এবং প্রসেসর থেকে মেমরি অথবা মেমরি থেকে প্রসেসর এবং মেমরি থেকে ইনপুট/আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে। এ ধরনের বাসের মধ্যে উভয় দিকেই ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে। তাই ডেটা বাসকে দ্বিমুখী বা ইর-ফরৎবপঃরড়হধষ বাস বলা হয়। ডেটা বাস ৮ বিট, ১৬ বিট, ৩২ বিট, ৬৪ বিট বা তারও বেশি ক্ষমতার হতে পারে। যেমন ১৬ বিটের ডেটা বাসের মধ্য দিয়ে একক সময়ে ১৬ বিট ডেটা চলাচল করতে পারে।
অ্যাড্রেস বাস (Address Bus) : মূলত কম্পিউটারের মেমরিতে তথ্যসমূহ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু মেমরিতে কোনো তথ্য সংরক্ষণের জন্য অথবা মেমরি হতে তথ্য আহরণের জন্য মাইক্রোপ্রসেসরের প্রয়োজন নির্দিষ্ট মেমরি অ্যাড্রেস। কম্পিউটার সিস্টেমে মাইক্রোপ্রসেসর ও মেমরি উভয়ের মধ্যে একগুচ্ছ লাইন বা তার সংযুক্ত থাকে, যার মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসর মেমরির নির্দিষ্ট অ্যাড্রেসে যোগাযোগ করে তথ্য আহরণ করে বা সংরক্ষণ করে। এই গুচ্ছ লাইন বা তারগুলোই হলো অ্যাড্রেস বাস। অর্থাৎ মাইক্রোপ্রসেসর অ্যাড্রেস বাসের মাধ্যমে RAM/ ROM স্মৃতির বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে সে স্থানে সংরক্ষিত তথ্য ডেটা বাসের মাধ্যমে পড়ে নেয় কিংবা নতুন তথ্য লিখে রাখতে পারে। অ্যাড্রেস বাস এক ধরনের একমুখী, অর্থাৎ অ্যাড্রেস বাসের মাইক্রোপ্রসেসর থেকে তথ্য সর্বদা অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায়। অ্যাড্রেস বাসের সাহায্যে মাইক্রোপ্রসেসর বিশেষ কোনো রেজিস্টার অথবা ইনপুট বা আউটপুট পোর্টের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করে। অ্যাড্রেস বাসে ৮, ১৬ বা আরও বেশি তার থাকে। এতে যদি হ সংখ্যক তার থাকে, তাহলে তার দিয়ে 2nটি অ্যাড্রেস থেকে ডেটা পড়া ও লেখা যায়। যেমন ৮ বিট অ্যাড্রেস বাসে ২৮ বা ২৫৬ টি মেমরি সেল বা অ্যাড্রেস থেকে ডেটা পড়া বা লেখা সম্ভব।
কন্ট্রোল বাস (Control Bus) : কন্ট্রোল বাস এক ধরনের দ্বিমুখী বাস। কম্পিউটারের অভ্যন্তরে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী বাস হচ্ছে কন্ট্রোল বাস। এ ধরনের বাসের মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসর হতে নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশে যায়। অর্থাৎ কম্পিউটারের সিস্টেম ইউনিটের অভ্যন্তরে মাইক্রোপ্রসেসর ও অন্যান্য ডিভাইসসমুহের মধ্যে কন্ট্রোল সিগন্যাল আদান-প্রদান হয় এ ধরনের বাসের মধ্যে দিয়ে। মাইক্রোপ্রসেসর মেমরি হতে তথ্য পড়বে বা লিখবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে কন্ট্রোল বাস ব্যবহৃত হয়।
সম্প্রসারিত বাস
Expansion Bus
যে সকল বাস প্রধান বাসের সাহায্যকারী বাস হিসেবে কাজ করে তাকে সম্প্রসারিত বাস বা এক্সপানশন বাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ঈচট এক্সপানশন বাসের সাহায্যে কম্পিউটারের ইনপুট/আউটপুট ও অন্যান্য পেরিফেরিয়াল ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করে। কম্পিউটারে বর্ধিত সুবিধা পাবার জন্য মাদারবোর্ডে কোনো ডিভাইস (যেমন- নেটওর্য়াক কার্ড, সাউন্ড কার্ড, এজিপি কার্ড, টিভি কার্ড ইত্যাদি) যে স্লটে স্থাপন করা হয় তাকে এক্সপানশন স্লট বলে। এক্সপানশন স্লটগুলো এক্সপানশন বাসের সাহায্যে/দ্বারা সিপিইউকে পেরিফেরিয়াল ডিভাইসগুলোর সাথে সংযুক্ত করে। গতির দিক থেকে সকল এক্সপানশন বাস একই রকম হয় না। মাইক্রোপ্রসেসর যে গতিতে ডেটা সঞ্চালন করতে পারে অধিকাংশ এক্সপানশন বাস তার চেয়ে অনেক কম গতির হয়ে থাকে।
কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক ধরনের এক্সপানশান বাস আবিস্কৃত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এক্সপানশন বাসগুলো হচ্ছে-
১. আইএসএ বাস (ISA-Industry Standards Architecture)
২. ইআইএসএ বাস (EISA - Extended Industry Standards Architecture)
৩. লোকাল বাস (Local Bus) – i. ভেসা (VESA-Video Electronic Standard Architecture), ii. পিসিআই (PCI- Peripheral Component Interconnect )
৪. ইউএসবি (USB- Universal Serial Bus)
৫. ফায়ারওয়্যার বাস (Fireware Bus) ev IEEE 1394
৬. এজিপি (AGP – Accelerated Graphics Port); ইত্যাদি।
আইএসএ বাস (ISA BUS) : ISA-এর পুরো নাম Industry Standard Architecture. এটি একটি ধীরগতিসম্পন্ন বাস। ১৯৮১ সালে আইবিএম ইন্টেলের ৮০৮৮ প্রসেসরে ISA বাস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তখন এটি ছিল ৮ বিট ডেটা বাস। এর কাজের গতি ছিল ৮ মেগাহার্টজ।
EISA Bus : EISA-এর পুরো নাম হচ্ছে Extended Industry Standard Architecture. ১৬ বিটের ISA বাসের বর্ধিত সুবিধা যোগ করে ৩২ বিটের EISA বাস তৈরি করা হয়। এ ধরনের বাস ৮ মেগাহার্টজ গতিতে কাজ করলেও এর ডেটা ট্রান্সফার হার ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩৩ মেগাহার্টজ।
লোকাল বাস (Local Bus) : যেসব বাস প্রধান বাসের তথ্য পরিবহনের চাপ কমিয়ে কম্পিউটারকে দ্রুতগতিতে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেয় তাকে লোকাল বাস বলে। যেমন : ১৬ বিটের ডেটা বাসবিশিষ্ট (ISA Industry Standard Architecture) ৮ মেগাহার্টজের বেশি কাজ করতে পারে না। কিন্তু ৩২ বিটবিশিষ্ট ডেটা পথের লোকাল বাস ৫০ মেগাহার্টজের বেশি গতিতে কাজ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের লোকাল বাস আছে। তার মধ্যে দুটি Standard Local Bus-এর নাম নিম্নে দেওয়া হলো-
১। VESA (Video Electronic Standard Association) ও
২। PCI (Peripheral Component Interconnect)
ভেসা বাস (VESA Bus) : VESA-এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে Video Electronic Standard Association. VESA Bus ৩২ বিট সিপিইউ গতিতে তথ্য বহন করতে পারে। এটি গ্রাফিক্সের কাজের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। কারণ মনিটরের পর্দায় তাৎক্ষণিকভাবে এবং উন্নতমানের গ্রাফিক্স আউটপুট প্রদর্শনের জন্য কম্পিউটারের সিপিইউ, স্মৃতি এবং ভিডিও টার্মিনালের মধ্যে দ্রুতগতিতে তথ্য বিনিময়ের প্রয়োজন হয়। এ বাস সিপিইউ-এর নিয়ন্ত্রণে সিপিইউ-এর সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে কাজ করে। IDE (Integrated Drive Electronic), SCSI (Small Computer System Interface), LAN (Local Area Network) ইত্যাদির ক্ষেত্রে VESA Bus ব্যবহার করা হচ্ছে।
পিসিআই বাস (PCI BUS) : PCI-এর পূর্ণ অর্থ Peripheral Component Interconnect । PCI evmI VESA বাসের মত ৩২ বিট বা ৬৪ বিট গতিতে কাজ করতে পারে। PCI বাসের সাহায্যে কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দ্রুতগতিতে তথ্য পরিবহন করা যায়। PCI বাস হচ্ছে সিস্টেম বাস এবং সম্প্রসারিত বাস ব্যবস্থাপনার মাঝামাঝি বিশেষ ধরনের বাস ব্যবস্থা। PCI Bus সরাসরি প্রসেসরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে । VESA BUS-এর তুলনায় PCI BUS অনেক বেশি দক্ষ।
USB বাস : USB-এর পূর্ণ অর্থ হলো Universal Serial Bus. ১৯৯৮ সাল থেকে ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি কম্পিউটারগুলোতে এ ধরনের বাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বাস দিয়ে সিরিয়াল পদ্ধতিতে ডেটা চলাচল করে। USB বাস অন্যান্য বাসের তুলনায় কম গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে কিন্তু এটি প্রচলিত সিরিয়াল বাসের তুলনায় অনেকটা উন্নত। এ ধরনের বাসের সুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১। বাসের মধ্য দিয়ে একই গতিতে ডেটা চলাচল করে। ফলে যেসব ডিভাইসের মধ্যে একই গতিতে ডেটা চলাচলের প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে এ ধরনের বাস ব্যবহার করা হয়।
২। এ ধরনের বাসে একসাথে অনেকগুলো যন্ত্রের সংযোগ প্রদান করা যায়।
৩। USB বাস পেরিফেরাল যন্ত্রগুলো হতে সিপিইউতে দ্রুতগতিতে ডেটা আদান-প্রদানে সহায়তা করে ইত্যাদি।
ফায়ারওয়্যার (FIREWARE) : ফায়ারওয়্যার হচ্ছে এ যাবৎকালের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতির বাস। এ বাসের আরেকটি নাম হচ্ছে IEEE 1394। এ ধরনের বাসের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
১। অত্যন্ত দ্রুতগতির বাস। প্রতি সেকেন্ডে ১০০, ২০০ বা ৪০০ মেগাবাইট ডেটা স্থানান্তর সম্ভব।
২। প্রখ্যাত ডিজিটাল ভিডিও ও অন্যান্য ডিজিটাল যন্ত্রের নির্মাতারা একে সমর্থন করায় ফায়ারওয়্যার একটি আদর্শ উচ্চগতির বাসের আদর্শ হয়ে পড়েছে।
AGP : AGP-এর পূর্ণ অর্থ হলো Accelerted Graphics Port. উন্নতমানের ছবি দৃশ্যমান করার জন্য ব্যবহৃত পোর্ট বিশেষ। আধুনিককালের সকল মাদারবোর্ড ও এজিপির ব্যবহার করার জন্য পৃথক স্লট রয়েছে। উচ্চমানের গ্রাফিক্সকে দ্রুত ও নিখুঁতভাবে প্রদর্শনযোগ্য করার জন্য ইন্টেল AGP কার্ডের উন্নয়ন করে। বিশেষ করে ত্রিমাত্রিক ছবি প্রদর্শনের জন্য কম্পিউটারের গেমস ও কম্পিউটারের এইডেড ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ছবির মান উন্নয়নের জন্য এ ধরনের পোর্টের উন্নতি ঘটেছিল।
এটি গ্রাফিক্সের জন্য পিসিআই বাসের উন্নত সংস্করণ। কিন্তু পিসিতে এটি স্বাধীনভাবে গ্রাফিক্সের জন্য কাজ করে। ১৩৩.২ মেগাহার্টজ গতিতে এজন্য সঞ্চালন হার সর্বোচ্চ দাঁড়ায় ৫৩৩ মেগাবিট/ সেকেন্ড। মাদারবোর্ডে এজিপি কার্ড স্থাপনের জন্য একটিমাত্র এজিপি স্লট থাকে।

0 comments:
Post a Comment